প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের অভিযোগের প্রতিবাদ
ইউনূস সেন্টার প্রেস রিলিজ – মে ৩০, ২০২৪
অভিযোগ
নব্বইয়ের দশকে যখন ডঃ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন, তখন চট্টগ্রামে অবস্থিত ডঃ ইউনূস ও তার পরিবারের মালিকানাধীন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস কর্পোরেশন লিমিটেডকে গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ম-কানুন না মেনে ৯.৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়।
জবাব
প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মালিকরা, অর্থাৎ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং তার পরিবারের কেউ গ্রামীণ ব্যাংকের থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কোনো ইচ্ছা থেকে তাঁরা গ্রামীণ ব্যাংকের সংগে কোন চুক্তি করেননি। তাঁরা গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবহারের জন্য তাদের ছাপাখানা দিতে চেয়েছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংক সেটা গ্রহণ করেছিল। গ্রামীণ ব্যাংক এবং প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে এটা খুব স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে যে প্যাকেজেস এর মালিকরা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কোন প্রকার আর্থিক সুবিধা যেমন, লভ্যাংশের ভাগ, জমির ভাড়া, ভবন ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য কোন ধরনের অর্থ নেবে না। সব কিছু বিনা মূল্যে দেয়া হবে।গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে চুক্তির মেয়াদকালে এই ব্যবস্থা বহাল থাকবে। এটা গ্রহণ করার পেছনে ব্যাংকের উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ ব্যাংকের মুদ্রণ সামগ্রীর খরচ কমানো, মানসম্মত মুদ্রণ নিশ্চিত করা এবং সমস্ত মুদ্রণ সামগ্রীর সময়মতো ডেলিভারি নিশ্চিত করা। মালিকরা আক্ষরিক অর্থে গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে বিনা আর্থিক সুবিধায় প্ল্যান্টটি হস্তান্তর করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংক অফারটি অবহেলা করতে পারেনি যেহেতু ব্যাংক তখন খুব দ্রুত প্রসারিত হচ্ছিল এবং মানসম্পন্ন মুদ্রণ সামগ্রীর দ্রুত সরবরাহের ব্যাপক প্রয়োজন ছিল। ইউনূস পরিবারের প্রিন্টিং প্ল্যান্ট সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব কোন ধরণের আর্থিক বাধ্যবাধকতামুক্ত একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় অফার হিসাবে এসেছিল।
চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর এবং প্যাকেজেস এর প্ল্যান্ট এবং সম্পত্তি গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর করার পর প্যাকেজেস কর্পোরেশনের একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয় । প্যাকেজেস কর্পোরেশন তখন থেকে আর তা মালিকদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, মালিকদের সংগে আর কোন আর্থিক লেনদেন হয়নি।
এটি প্যাকেজেস কর্পোরেশনের একটি নতুন অধ্যায় যেখানে মালিকরা আর্থিক বিষয়গুলি সহ কোম্পানির সমস্ত বিষয় থেকে নিজেদেরকে সম্পূর্ণভাবে দূরে সরিয়ে ফেলেছিলেন।
এই নতুন অধ্যায়এ প্যাকেজেস কর্তৃক প্রাপ্ত কোনো ঋণ কোনোভাবেই কোম্পানির মালিকদের কাছে যাবার কোন সুযোগ থাকে না। ঋণ হলে সেটা হবে গ্রামীণ ব্যাংকের নেটওয়ার্কের অভ্যন্তরীণ আর্থিক লেনদেন। চুক্তি অনুযায়ী নতুন প্যাকেজসকে দেওয়া কোনো ঋণ মালিকদের কাছে পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই। এটি সর্বদা গ্রামীণ ব্যাংক নেটওয়ার্কের মধ্যে থাকবে -- গ্রামীণ ব্যাংক এবং এর প্রকল্পের মধ্যে, অথবা গ্রামীণ ব্যাংক দ্বারা মনোনীত কোন সামাজিক ব্যবসার মধ্যে থাকবে। মালিকদের কাছে কোনক্রমেই যাবে না। অতএব অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এটি গ্রামীণ ব্যাংক চুক্তি-পরবর্তী পর্যায়ে মালিক-সম্পৃক্ততা-মুক্ত প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে ঋণ দিয়েছে। তাও গ্রামীণ ব্যাংক থেকে নয়, দাতা সংস্থা সমূহের সমবেত আর্থিক সাহায্যে গঠিত SVCF (সোশ্যাল বিজনেস ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড) নামে পরিচিত সামাজিক ব্যবসা তহবিল থেকে ঋণ এসেছে। সামাজিক ব্যবসাকে প্রতিষ্ঠা ও প্রচারের জন্য দাতাদের অর্থায়নে SVCF তৈরি করা হয়েছিল।
অভিযোগ
ইউনূস ও তার পরিবার ব্যাংকের কোটি কোটি টাকার প্রিন্টিং সামগ্রী চড়া দামে ছাপানোর জন্য পারিবারিক কোম্পানিকে কার্যাদেশ দিয়ে বিপুল আর্থিক সুবিধা নেন।
জবাব
এই চুক্তি ২৫ বছর যাবত কার্যকর ছিল। এই ২৫ বছরে গ্রামীণ ব্যাংক প্যাকেজেসকে মোট ঋণ দিয়েছে ৯.৬৬ কোটি টাকা
প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মালিকরা, অর্থাৎ অধ্যাপক ইউনূস ও তার পরিবার, গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে চুক্তির মাধ্যমে কোন আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেননি। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
গ্রামীণ ব্যাংক বা এর মনোনীত কোম্পানি গ্রামীণ-ব্যাংক-নিয়ন্ত্রিত প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে মুদ্রণের আদেশ দেয়, যার সাথে ইউনূস পরিবারের কোনো সম্পর্ক ছিল না। গ্রামীণ ব্যাংক ও প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে এটা স্পষ্ট করা হয়েছিল যে প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মালিকরা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে কোন প্রকার আর্থিক সুবিধা যেমন, লাভের ভাগ, জমির ভাড়া, ভবন ও যন্ত্রপাতি, ইত্যাদির জন্য যে কোন প্রকারের দেয় নেবেন না। সমগ্র দ্বিপাক্ষিক চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল গ্রামীণ ব্যাংকের মুদ্রণ সামগ্রীর খরচ কমানো, মানসম্মত মুদ্রণ নিশ্চিত করা এবং মুদ্রণ সামগ্রীর সময়মতো ডেলিভারি নিশ্চিত করা। মালিকরা আক্ষরিক অর্থে গ্রামীণ ব্যাংকের কাছে বিনা আর্থিক সুবিধায় প্রিন্টিং প্ল্যান্টটি ব্যবহারের জন্য হস্তান্তর করেছিলেন।
অভিযোগ
গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী, ব্যাংকের ঋণ সুবিধা ভূমিহীন দরিদ্র ঋণগ্রহীতাদের জন্য সীমাবদ্ধ, কিন্তু জনাব ইউনূস আইন ভঙ্গ করেন এবং তার পারিবারিক প্রতিষ্ঠান প্যাকেজেস কর্পোরেশনকে ঋণ প্রদান করেন।
জবাব
প্রফেসর ইউনূস কোন আইন ভঙ্গ করেননি ।
প্যাকেজেস কর্পোরেশন দাতা সংস্থা সমূহের সহায়তায় সৃষ্ট SVCF ((সোশ্যাল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ড) নামক তহবিলের থেকে ঋণ পেয়েছিল ।
গ্রামীণ ব্যাংক এবং প্যাকেজেস কর্পোরেশনের মধ্যে চুক্তি অনুসারে, প্যাকেজেস কর্পোরেশন যদি কোন লাভ করে, মালিক পক্ষ কখনই সেই লাভের কোন অংশ পাবে না। চুক্তিকালে প্যাকেজেস কর্পোরেশন কখনই কোন লাভ করেনি কারণ মূল্য নির্ধারণের ব্যাপারে গ্রামীণ ব্যাংকের মূল্য নির্ধারণী কমিটি কঠোরভাবে কাজ করতো। মূল্য নির্ধারণ কমিটি যে মূল্য নির্ধারণ করতো তা সর্বদা বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম থাকতো।
অভিযোগ
যখন প্যাকেজেস কর্পোরেশন ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়, তখন তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করেন এবং ইউনূস পরিবারকে লাভবান করার জন্য ব্যাংকের কাছ থেকে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ মওকুফ করেন।
জবাব
ইউনূস পরিবার প্যাকেজেস কর্পোরেশনের আর্থিক বিষয়ে জড়িত ছিল না। মালিকপক্ষ কোন ঋণ নেয়নি। কাজেই মকুফ করার করার প্রশ্নই ওঠেনা। চুক্তির ২৫ বছর মেয়াদকালে গ্রামীণ ব্যাংক মোট ঋণ দিয়েছে ৯.৬৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে যে অনাদায়ী টাকা মকুবের কথা বলা হচ্ছে তার পরিমাণ হচ্ছে ৭ লক্ষ ২২ হাজার টাকা।
ইউনূস পরিবারকে সুবিধা দিতে ব্যাংকের “উল্লেখযোগ্য পরিমাণ” অর্থ মওকুফ করার ক্ষমতার অপব্যবহার করার অভিযোগ ভিত্তিহীন।
অভিযোগ
পরিচালনা পর্ষদকে না জানিয়ে মিঃ ইউনূস প্যাকেজ কর্পোরেশনের সাথে একটি 'ম্যানেজিং এজেন্ট' চুক্তিতে প্রবেশ করেন, যা ব্যাংকের সুবিধার বিরুদ্ধে ছিল। এছাড়াও তিনি ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে প্যাকেজেস কর্পোরেশনে নিয়োগ দেন এবং প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনার উদ্দেশ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের অফিস বিনামূল্যে ব্যবহার করেন।
জবাব
প্যাকেজেস কর্পোরেশনের সাথে গ্রামীণ ব্যাংক যে ব্যবস্থাই করুক না কেন, তা গ্রামীণ ব্যাংকের কর্তৃপক্ষের দ্বারা করা হয়েছে। গ্রামীণ ব্যাংকের একাধিক বোর্ড সভায় চুক্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বোর্ড চুক্তির বাস্তবায়নে উৎসব সহকারে সহযোগিতা করেছে।
গ্রামীণ ব্যাংক যখন মুদ্রণের এই বৃহৎ কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নেয় এবং সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা প্রতিটি শাখায় সঠিক সময়ে, সঠিক মুদ্রণ সামগ্রী, সঠিক পরিমাণে সরবরাহ করে, তখন গ্রামীণ ব্যাংক তার কয়েকজন কর্মীকে এই কাজ করার দায়িত্ব দেয়।
এটা গ্রামীণ ব্যাংকের সম্প্রসারণ পর্বের ব্যস্ততম সময় । অতি অল্প সময়ের মধ্যে পাঁচশত শাখা থেকে এক হাজার শাখায় উন্নীত করার কর্মসূচি নিয়ে এগুচ্ছিল গ্রামীণ ব্যাংক। দেশের দূরদূরান্তে তখন শাখা স্থাপন করা হচ্ছিলো। সঠিক সময়ে, সঠিক ফরম, লেজার, পাসবই, সঠিক পরিমানে পৌঁছানো একটা বিরাট কর্মযজ্ঞ ছিল। তার জন্য দক্ষ সহকর্মীর প্রয়োজন ছিল এবং গ্রামীণ ব্যাংক তাদের নিয়োজিত করেছিল।গ্রামীণ ব্যাংকের অফিস এবং প্যাকেজেসের অফিসে তারা কাজ করেছে। প্যাকেজেসের অফিস তারা নিজেদের অফিস হিসেবেই গণ্য করেছে।
সমাপ্ত।
Related
Yunus Never Convicted of Tax Evasion. No such case existed. - Rejoinder to Law Minister's statement in Reuters' news
ইউনূস কখনোই কর ফাঁকির দায়ে অভিযুক্ত হননি। কর ফাঁকির কোনো মামলা ছিল না। - রয়টার্সের খবরে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ।
Rejoinder to Grameen Bank’s Allegations against Professor Yunus

ডক্টর ইউনূস প্রসঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রেস কনফারেন্সে উত্থাপিত বিষয়ের প্রতিবাদ
Rejoinder on Allegations Regarding Padma Bridge, Tax Evasion and Illegal Money Transfer Abroad
