ইউনূস সেন্টার আয়োজিত দ্বাদশ বার্ষিক সামাজিক ব্যবসা সম্মেলন শুরু হচ্ছে ২৭ জুন
ইউনূস সেন্টার প্রেস রিলিজ (২৭ জুন ২০২২)
জুন ২৭-৩০, ২০২২ ইউনূস সেন্টারের আয়োজনে ও নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের পৃষ্ঠপোষকতায়. এবছর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ সামাজিক ব্যবসা দিবস। এ বছরের সামাজিক ব্যবসা দিবসের বিষয়বস্তু হচ্ছে: বর্তমান সভ্যতা আমাদের ধ্বংস করে ফেলার আগেই একটি নতুন সভ্যতা গড়ে তুলতে হবে। এ বছর পূর্ব আফ্রিকার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়, যেমন ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব জিম্বাবুয়ে এবং তার সহযোগী হিসেবে উগান্ডার কাম্পালা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ম্যাকেরেরে ইউনিভার্সিটি বিজনেস স্কুল, কেনিয়ার তানগাজা ইউনিভার্সিটি কলেজ, বেনিনের আবোমে কালাবি এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের সি.এ.এম. স্কুল অব বিজনেস সম্মেলনের বৈশ্বিক আয়োজনের সমান্তরালে স্থানীয়ভাবে সশরীরে উপস্থিত থেকে সামাজিক ব্যবসা দিবসের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করছে। সামাজিক ব্যবসার উদ্যোক্তাগণ, সামাজিক ব্যবসার অনুসারী ও হিতৈষীবৃন্দ এবং এর সাথে যুক্ত অধ্যাপকবৃন্দের জন্য দিবসটি সামাজিক ব্যবসার জন্য একটি মহামিলনের সুযোগ এনে দেয়। বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং নিজেদের মধ্যে এ বিষয়ক সংলাপ বিনিময়ের মধ্য দিয়ে একে অপরের নিকট থেকে শেখার ও পরস্পরকে অনুপ্রাণিত করার জন্য এটি একটি বৈশ্বিক প্লাটফরম হিসেবে কাজ করে।
তিরিশ জন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছাড়াও এ বছরের সম্মেলনে সর্বমোট ১৩৫ জন বক্তা তাঁদের বক্তব্য রাখবেন। চার দিনের এই সম্মেলনে থাকছে ১৪টি দেশের জন্য স্বতন্ত্র কান্ট্রি ফোরাম ও ১৬টি সেশন। পৃথিবীর ৫৮টি দেশ থেকে ৬০০-এর বেশী নিবন্ধিত অংশগ্রহণকারী সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন।
মূল বক্তাদের মধ্যে থাকছেন নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৯৬ জয়ী পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্ট হোসে রামোস অরতা, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ, নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী এবং নোবেল উইমেন’স ইনিশিয়েটিভ এর সভাপতি জোডি উইলিয়ামস, জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারী জেনারেল এবং ESCAP -এর নির্বাহী সম্পাদক আরমিডা সালসিয়াহ আলিসজাবানা, জেন গুডল ইনস্টিটিউট এর প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতিসংঘের শুভেচ্ছা দূত জেন গুডল, ডিবিই, UNAIDS -এর নির্বাহী পরিচালক উইনি বিয়ানিমা, নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী মেইরিড ম্যাগুয়াইয়ার, এবং নারায়ণ রূদয়ালয় -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. দেবী শেটী।
উল্লেখযোগ্য অন্য বক্তাদের মধ্যে আরো রয়েছেন মেক্সিকোর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ভিনসেন্ট ফক্স , ব্রাজিলের প্রাক্তন পরিবেশমন্ত্রী মারিনা সিলভা, সমাজকর্মী ও অভিনেত্রী লিলি কোল, মাস্টার অব ইউনিভার্সিটি কলেজ অক্সফোর্ড ব্যারোনেস ভ্যালেরী আমোস, ইন্টারন্যাশনাল এইডস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট চিকিৎসাবিদ্যা ও সংক্রামক রোগের অধ্যাপক আদীবা কামারুলজামান, সীড গ্লোবাল হেলথ-এর প্রতিষ্ঠাতা হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল-এর ড. ভ্যানেসা কেরী, ইউগ্লেনা-র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মিৎসুরু ইজুমো, সোশ্যাল এন্টারপ্রাইজ ইউকে-এর প্রধান নির্বাহী পিটার হলব্রুক, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কেনিয়ার পল টেরগাট প্রমূখ।
সমাপনী বক্তব্য রাখবেন লেখিকা ও মানবাধিকার কর্র্মী মারিনা মাহাথির, মানবাধিকার সংগঠন রবার্ট এফ কেনেডী হিউমান রাইটস-এর প্রেসিডেন্ট কেরী কেনেডী, গ্রামীণ আমেরিকা’র প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী অ্যান্ড্রিয়া জাং, থিংক-অস্ট্রিয়া এর হেড অব স্ট্র্যাটেজী ইউনিট এবং ফেডারেল চ্যান্সেলর এর বিশেষ উপদেষ্টা ড. অ্যান্টোনেলা মেই-পচলার, জাতি সংঘ এসডিজি অ্যাডভোকেট এবং হুইটেকার পিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট ইনিসিয়েটিভ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ফরেস্ট হুইটেকার, এবং নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৩ জয়ী শিরিন এবাদি।
প্রতি বছরই সামাজিক ব্যবসার বিভিন্ন যুগান্তকারী আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করতে এবং এসব আইডিয়া বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে সামাজিক ব্যবসা দিবসের আয়োজন করা হয়। প্লেনারী সেশনগুলিতে বিশেষজ্ঞরা সামাজিক ব্যবসার গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলিতে তাঁদের অভিজ্ঞতা অন্যদের সাথে বিনিময় করবেন। বিভিন্ন প্যানেল সেশন ও প্লেনারীগুলিতে অংশগ্রহণকারীরা পরস্পরের সাথে তাঁদের স্ব-স্ব আগ্রহ ও কর্ম এলাকায় তাঁদের অভিজ্ঞতা অন্যদের সাথে বিনিময় করার মাধ্যমে নিজেদের ধারণাগুলি আরো শানিত করার সুযোগ পাবেন।
সামাজিক ব্যবসা দিবস হচ্ছে একটি বার্ষিক আয়োজন যেখানে সামাজিক ব্যবসার নেতৃবৃন্দ ও উদ্যোক্তারা পৃথিবীর জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণে তাঁদের সঞ্চিত অভিজ্ঞতা পরস্পরের সাথে বিনিময় করতে সমবেত হন।
এ বছরের বিষয়বস্তুর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, বেকারত্ব দূরীকরণ, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আন্তঃদেশীয় সহযোগিতা, সামাজিক ব্যবসায়ে ক্রীড়ার ভূমিকা, থ্রি-জিরো ক্লাব, এবং সামাজিক ব্যবসার উপর একাডেমিক গবেষণা।
মুনাফা সর্বোচ্চকরণের উপর প্রতিষ্ঠিত বর্তমান সভ্যতা মানব জাতিকে আত্মহননের পথে চালিত করছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স-সৃষ্ট বেকারত্ব পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। একটি নতুন লক্ষ্যে, নতুন গতিপথে মানবজাতিকে চালিত করার পথ ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হয়ে আসছে। সুযোগ একেবারে হাতছাড়া হওয়ার আগেই একটি নতুন সভ্যতার বীজতলা তৈরীর কাজটি আমাদের এখনই করে ফেলতে হবে।
এই নতুন সভ্যতাকে মানুষ ও এই গ্রহের সমস্যাগুলির সমাধানে শূন্য ব্যক্তিগত মুনাফা-ভিত্তিক একটি অর্থনীতির উপর গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক ব্যবসা এই বিকল্পটিই আমাদের সামনে হাজির করে। এই ব্যবসা মানুষ ও অর্থনীতির সামনে থাকা সুযোগগুলিকে অবারিত করে একটি সহমর্মিতা-নির্ভর, বাস্তব ও দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথ অনুসন্ধান করে। এই নতুন সভ্যতা আমাদের অগ্রগতিগুলিকে বিশ্লেষণ করে সময় শেষ হয়ে যাবার আগেই আমাদের পরবর্তী কাঙ্খিত পদক্ষেপের জন্য আমাদেরকে প্রস্তুত করে।
বরাবরের মতো সামাজিক ব্যবসা দিবস ২০২২ -এ অন্তর্ভূক্ত রয়েছে প্লেনারী সেশন, ওয়ার্কশপ ও কান্ট্রি ফোরাম যেখানে অংশগ্রহণকারীগণ তাঁদের আইডিয়া, তথ্য ও অভিজ্ঞতা অন্যদের সাথে বিনিময় করবেন। সম্মেলনের মূল ভাষা ইংরেজী হলেও কোনো কোনো সেশন বাংলা, স্প্যানিশ, জাপানী, চীনা, ফ্রেঞ্চ ও পর্তুগীজ ভাষায় আয়োজিত হবে; দেশ-ভিত্তিক ফোরামগুলিতে এই সেশনগুলি সমান্তরালে পরিচালিত হবে।
অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তুগুলির মধ্যে রয়েছে ক্ষুদ্র্ঋণ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শিল্পকলা ও প্রযুক্তিতে সামাজিক ব্যবসা, তরুণ সমাজ, ক্রীড়া, থ্রি-জিরো ক্লাব, এবং একটি নতুন সভ্যতা বিনির্মাণের সকল দিক।
আয়োজনের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে “থ্রি-জিরো ক্লাবসমূহের” বার্ষিক সম্মেলন এবং শূন্য নীট কার্বন নিঃসরণ, দারিদ্র দূরীকরণের লক্ষ্যে শূন্য সম্পদ-কেন্দ্রীকরণ ও সকলের মধ্যকার উদ্যোক্তা-শক্তি অবারিত করার মাধ্যমে শূন্য বেকারত্বের একটি “তিন-শূন্যর পৃথিবী” গড়ে তুলতে তরুণদের বৈশ্বিক উদ্যোগ। তরুণদের এই বার্ষিক সম্মেলন বয়োজ্যেষ্ঠ প্রজন্মগুলির সদস্যদের কাছে তরুণ প্রজন্ম কী ভাবছে তা জানতে এবং তরুণ ও বয়োজ্যেষ্ঠ প্রজন্মদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরী করতে সুযোগ তৈরী করে দেবে।
কান্ট্রি ফোরামগুলির পরিকল্পনা করা হয়েছে বিভিন্ন দেশে ও অঞ্চলে সামাজিক ব্যবসার তত্ত্বের বাস্তব প্রয়োগের উপর ভিত্তি করে। এই ফোরামগুলি তাদের স্ব-স্ব দেশ ও অঞ্চলের অভিজ্ঞতা বিনিময়, বিভিন্ন সম্ভাবনার অনুসন্ধান, এবং প্রতিটি দেশ বা অঞ্চলভূক্ত দেশগুলির সামাজিক ব্যবসার প্রকৃত অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্লাটফরম হিসেবে কাজ করবে। ফোরামগুলির আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে স্ব-স্ব দেশের ভাষায় এবং এসব দেশগুলির সামাজিক ব্যবসার চর্চাকারীগণ এই ফোরামগুলিতে নেতৃত্ব দেবেন।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সম্পদের চরম কেন্দ্রীকরণ, কোভিড মহামারী, এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের সম্মিলিত শক্তি বিশ্ব ইতিহাসে একটি অতি ভয়ংকর সন্ধিক্ষণের সৃষ্টি করেছে। একটি নতুন সভ্যতা সৃষ্টি ছাড়া এই গ্রহ ও তার আশ্রয়ে থাকা মানুষদের রক্ষা করার জন্য আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।