X

Type keywords like Social Business, Grameen Bank etc.

ভবিষ্যতের যানবাহন

ভবিষ্যতের যানবাহন

মুহাম্মদ ইউনূস

 

আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় সফরগুলোর একটি আমার স্মৃতিতে এখনো উজ্জ্বল হয়ে আছে। সেটা ১৯৫৫ সালের কথা। সে বছর কানাডায় অনুষ্ঠিত বয় স্কাউটদের ১০ম বিশ্ব জাম্বুরীতে অংশগ্রহণকারী বয় স্কাউটদের দলটি ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা ভ্রমণের সুযোগ পায়। আমি সে দলের একজন সদস্য ছিলাম। তখন আমার বয়স ১৫ বছর। সেটা ছিল উত্তেজনায় ভরা অবিস্মরণীয় একটি সফর যা আমার মনে স্থায়ী ছাপ রেখে যায়। উদাহরণস্বরূপ, সমুদ্রগামী বিলাসবহুল জাহাজে চড়ে আটলান্টিকের ওপারে যাওয়া ও ফিরে আসা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তুপ থেকে ইউরোপের অনেক দেশের অভ্যুদয় প্রত্যক্ষ করা, দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশের গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা এক কিশোরের চোখে পৃথিবীকে দেখা - এসবই ছিল আমার কাছে এক অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা। পনের বছর বয়সী এক কিশোরের জীবনে জানার এমন সুযোগ কয়জনের হয়?

 

জাম্বুরীর দিনগুলি যেন দেখতে দেখতে ফুরিয়ে এলো। সাথে আমাদের রোমাঞ্চকর সফরও। আমাদের মন ক্রমেই খুব খারাপ হয়ে আসছিলো। কেবলই মনে হচ্ছিল দেখার আরো অনেক কিছু বাকি রয়ে গেছে। ভাগ্যিস আমাদের সফরের আয়োজকদের মাথায় ছিল অন্যরকম চিন্তা। তাঁরা চাইছিলেন আমাদের ২৭ জন কিশোরের বাড়ি ফেরাটা আরো রোমঞ্চকর হোক। তাঁরা তাঁদের আগের পরিকল্পনাটা সম্পূর্ণ বাতিল করে  আমাদেরকে সড়ক পথে মাইক্রোবাসে করে ইউরোপের ভেতর দিয়ে করাচী পৌঁছে দেবার কথা ভাবতে শুরু করলেন। তাঁরা পরিকল্পনা করলেন এতে আমাদের বিমান খরচ থেকে যে টাকাটা বেঁচে যাবে তা দিয়ে তিনটি মাইক্রোবাস কেনা হবে। এই মাইক্রোবাসগুলি এরপর পাকিস্তান স্কাউট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পত্তি হিসেবে থেকে যাবে। কী চমৎকার চিন্তা!


অবশ্য আইডিয়াটি যে সবারই পছন্দ হয়েছিল তা নয়। 


তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ বললেন, “না, এই বিশাল দূরত্ব মাইক্রোবাসে ভ্রমণের জন্য বড় বেশী বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে।” কেউ বললেন, “অনেকগুলি দেশের সীমান্ত পার হতে হবে যে!” কিন্তু শেষ পর্যন্ত আইডিয়াটি আমাদের সকলেরই সমর্থন পেল। আমাদের বয়স ছিল কম, এবং বাড়ি ও স্কুলে ফিরে যাবার চেয়ে অন্য যে-কোন বিকল্পই আমাদের কাছে বেশী আকর্ষণীয় ছিল। তার উপর স্থলপথে ইউরোপ এশিয়া ঘুরে দেখার প্রলোভন সামলাবার তো কোন প্রশ্নই আসে না। 


যা চিন্তা, তাই সিদ্ধান্ত হলো। স্থলপথে করাচী ফিরবো! আমরা সমুদ্রগামী জাহাজে চেপে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে লন্ডনে ফিরে এলাম। একটি দীর্ঘ সড়ক ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র ও প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হলো। আমরা জার্মানীর ওল্ফসবার্গে পৌঁছালাম। সেখানে ভক্সওয়াগনের কারখানা থেকে তিনটি চকচকে মাইক্রোবাস কিনে কারখানার ফটকদ্বার থেকেই স্থলপথে দেশে ফেরার দীর্ঘ যাত্রা শুরু করলাম। 


সফরটি ছিল খুবই উত্তেজনাপূর্ণ। প্রতিদিনই আমরা এক শহর থেকে আরেক শহর ভ্রমণ করছিলাম, ফেরার পথে কোনো আকর্ষণীয় শহর থাকলে সোজা পথ ছেড়ে ঘুরপথে গিয়ে শহরটি দেখে আসছিলাম। কোনো জায়গা ভাল লেগে গেলে সেখানে একটু বেশী সময় থাকছিলাম, আবার কখনো কখনো অপ্রত্যাশিত কোনো কারণে কোথাও যত দিন না দরকার তার চাইতে বেশী থাকতে হচ্ছিল। জার্মানী থেকে যাত্রা শুরু করে অস্ট্রিয়া, যুগোস্লাভিয়া, গ্রীস ধরে ভূমধ্যসাগরের উপকূল হয়ে তুরস্ক, লেবানন, ইরাক, সিরিয়ার মধ্য দিয়ে চার মাস চলার পর আমরা করাচী এসে পৌঁছালাম। এরপর ভারতের ভেতর দিয়ে আরো দু’সপ্তাহ ভ্রমণ শেষে আমার নিজ শহর চট্টগ্রামে ফিরে এলাম।


আমাদের এই সুদীর্ঘ সফরে অনেক অতিথিপরায়ণ মানুষের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ হয়েছে, অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে। আমাদের মনে হচ্ছিল গোটা পৃথিবীটাই যেন আমাদের নিজের বাড়ি।


এই অভিজ্ঞতা থেকে আমার মনে এই দৃঢ় বিশ্বাস জন্মালো যে, পৃথিবীকে পরিপূর্ণভাবে জানতে এবং এর বিভিন্ন স্থান ও তাদের মানুষ ও জীবন সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ করতে হলে বিশ্বব্যাপী বাধাবন্ধনহীন চলাচলের একটি পরিবেশ তৈরী করা প্রয়োজন। সারা পৃথিবীতেই  মানুষের একটা সহজাত প্রবণতা হচ্ছে তার দেশকে, তার প্রতিবেশী দেশকে, এবং গোটা পৃথিবীকে জানার।


তাছাড়া মানুষকে তার দৈনন্দিন প্রয়োজনে চলাচল করতে তো হয়ই। এটি ছাড়া তার পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব নয়। আমরা যেখানেই বাস করি-না কেন, বেঁচে থাকার জন্য আমাদেরকে গতিশীল থাকতেই হবে। অবশ্য কতটা গতিশীল হতে পারবো সেটা সে-দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপরই অনেকটা নির্ভর করে।


উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশে অধিকাংশ মানুষের ব্যক্তিগত মোটরযান নেই। এর কারণ এখানে বেশীরভাগ মানুষেরই এজন্য প্রয়োজনীয় আর্থিক সংগতি নেই। কিন্তু এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য একটা বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। আমরা নতুন করে চিন্তা করতে পারি সবার কাছে ব্যক্তিগত গাড়ি থাকুক - এটা আমরা চাই, কি চাই না। এর ফলে ব্যক্তিগত যানের চেয়ে গণ-পরিবহন নিয়ে চিন্তা করার একটি সুযোগ আমরা পেয়ে গেছি। এখন আমরা পরিবেশ-বান্ধব বিকল্পগুলো নিয়ে কাজ শুরু করতে পারি। আমরা সবুজ-জ্বালানি ভিত্তিক যানবাহনের দিকে মনোনিবেশ করতে পারি এবং জীবাশ্ম-জ্বালানি ভিত্তিক যান ব্যবহারে একটা সময়সীমা বেঁধে দিতে পারি। সবুজ-জ্বালানি ভিত্তিক গণ-পরিবহন ব্যবস্থাকে আমরা অগ্রাধিকার দিতে পারি। আমরা এমন ট্যাক্সি সার্ভিস চালু করতে পারি যেখানে নিয়মিত একক, দৈনিক বা মাসিক ভ্রমণের জন্য স্ব-গঠিত যাত্রী-দলগুলো নিজেরাই তাদের চলাচলের গতিপথ ও সময় নির্ধারণ করে দেবে। প্রত্যেক মানুষের জন্য আলাদা আলাদা গাড়ি আমরা নিরুৎসাহিত করতে পারি। 


বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১,৩০০ জন মানুষ বাস করে। চিন্তা করে দেখুন প্রত্যেক মানুষের জন্য একটা গাড়ি থাকলে আমাদের কী অবস্থা দাঁড়াবে? কল্পনা করুন এদেশে এমন একটি অবস্থা যেখানে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত যান রয়েছে, এবং তারপর চিন্তা করুন, এই সব যানই চলছে জীবাশ্ম-জ্বালানিতে! ইতোমধ্যেই জলবায়ু সংকটের কারণে বাংলাদেশের অবস্থা চরম পরিস্থিতিতে রূপ নিয়েছে। এই সংকটকে আরো ঘনীভ‚ত করতে না-চাইলে আমাদেরকে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।


বিভিন্ন কারণে যানবাহন ব্যবস্থা বাংলাদেশের দৈনন্দিন আলোচনার বিষয়। এর প্রধান দু’টি হচ্ছে বায়ু দূষণ ও দুর্ঘটনায় মৃত্যু। ঢাকায় যানবাহনের চাপ অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে বায়ু-দূষিত শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা অন্যতম। নিয়মিত ট্রাফিক জ্যাম ও গাড়ির হর্ণের শব্দ এখানে একটি নিত্যনৈমিত্তিক অভিজ্ঞতা।


গত এক বছরে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে ভ্রমণ বিষয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক কিছু শিক্ষা লাভ করেছে। এর একটি হচ্ছে কীভাবে মানুষের চলাচল ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনা যায়। আমরা এই এক বছরের মধ্যে ভ্রমণ ছাড়াই অনেক কাজ করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। মহামারী চলে যাবার পরও আমাদের জীবন-যাপন পদ্ধতির উপর তা যে মূল্যবান প্রভাব রেখে যাবে তা একেবারে নিশ্চিত। এই নতুন অভিজ্ঞতার অনেকগুলিই স্থায়ী হয়ে যাবে। আমরা এগুলো পছন্দ করছি এবং এগুলোর বিরাট ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছি। আমরা বুঝতে পেরেছি যে, বাড়িতে বসেই অফিস ও ব্যবসা চালানো সম্ভব। এখন আমরা আর এগুলোকে জরুরী অবস্থায় সাময়িক ব্যবস্থা হিসেবে গণ্য করবো না - আমরা এখন এগুলো করবো আমাদের নিজেদের সুবিধা ও বৈশ্বিক উষ্ণতার বিবেচনায়। এখন আমরা জানি যে, আমাদের বেশীর ভাগ সভাই ভার্চুয়ালি করা সম্ভব। এগুলো সময়-সাশ্রয়ী (ট্রাফিক জ্যামে আটকে থাকার ভয় নেই, ঢাকায় এক জায়গাতেই যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে হয়) এবং একই সাথে খরচ-সাশ্রয়ীও। এখন আমরা কোনো পেশাদার অনুষ্ঠান-পরিকল্পনাকারীর সহায়তা ছাড়াই যখন তখন দেশ-বিদেশের যত সংখ্যক ইচ্ছা অংশগ্রহণকারী নিয়ে সভা ও সম্মেলন করতে পারি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠাগুলি ভার্চুয়ালি শিক্ষাদান করতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আমরা দেখেছি কীভাবে জাতীয় সংসদের অধিবেশন, এমনটি জাতি সংঘের উচ্চ পর্যায়ের সভা-সম্মেলন এবং সরকার-প্রধানদের বৈঠক পর্যন্ত ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী বিনা খরচে সম্মেলন এখন একটি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগের পদ্ধতিতে একটি বৈশ্বিক সম্মেলন আয়োজন করতে গিয়ে যে বিপুল পরিমাণে কার্বন নিঃস্বরণ এবং আর্থিক ব্যয় হতো তার থেকে আমরা রক্ষা পেতে শিখেছি। ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল সভা ও সম্মেলনগুলো বিশ্বব্যাপী ভাইরাস সংক্রমণ থেকে আমাদের অনেকটাই রক্ষা করতে পারে। হঠাৎ করেই পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন ব্যবসা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পরিস্থিতিই জোর করে এগুলি আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে, তবে আমরা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে আসার পরেও এগুলি রেখে দেব কারণ আমরা এগুলি পছন্দ করছি, এদের উপকারিতা অনুভব করছি। যতই দিন যাবে আমরা এদেরকে আরো বেশী পছন্দসই করে নেবো।


এই নতুন বাস্তবতায় যানবাহন নিয়ে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। চলমান মহামারীটি আমাদের জন্য একটি বিরাট জ্ঞানার্জন প্রক্রিয়ার সৃষ্টি করে দিয়েছে। আমরা শুধু নিজেদেরকে মহামারী থেকে রক্ষা করতে এই ভার্চুয়াল যোগাযোগগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো না, এগুলি আমাদের পরিবেশ রক্ষায় এবং সাধারণভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও বিশাল ভ‚মিকা রাখবে। শীঘ্রই সম্ভাব্য সকল পর্যায়ে শারীরিক অংশগ্রণের পরিবর্তে ভার্চুয়াল যোগাযোগকে উৎসাহিত করতে আমরা বিভিন্ন নীতি ও কর্মপন্থা গ্রহণ করবো। সরকার এবং কোম্পানীগুলির পরিচালনা পরিষদ তাদের ব্যবস্থাপনার কাছে এজন্য বাৎসরিক মাইলেজ পরিকল্পনা চাইতে পারে, বিমান ও সড়ক পথে ভ্রমণে প্রতি বছর যত মাইল ভ্রমণ করা হয় তা ক্রমাগতভাবে কমাবার টার্গেট নির্ধারণ করার জন্য। এটি ভার্চুয়াল সভা-সম্মেলনকে উৎসাহিত করবে।


মানুষকে চলাচল করতে হবে। কিন্তু সেটাকে অবশ্যই সামাজিক ও পরিবেশগত দায়-দায়িত্বের সাথে সমন্বিত হতে হবে। চলাচল এমন একটি বিষয় যেখানে ব্যক্তিগত প্রয়োজন ও সমষ্ঠিগত প্রয়োজনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে। এই দুই চাহিদার মধ্যে সমন্বয় করতে পারলে ভবিষ্যতের যানবাহনের একটি পরিস্কার চিত্র আমাদের সামনে ফুটে উঠবে: একে হতে হবে দায়িত্বশীল, টেকসই, প্রয়োজন-নির্ভর, সহজ, স্বচ্ছন্দ ও সস্তা, এবং আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে যে, আমাদের কাছে অধিকাংশ সময়ই একটি বিকল্প রয়েছে, আর তা হলো ভার্চুয়াল যোগাযোগের বিকল্পটি।


সড়কে যান চলাচল কমিয়ে আনা ভবিষ্যতের চলাচল পদ্ধতির একটি লক্ষ্য হতে হবে। দুই ও তিন চাকার বাহনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে, এবং প্রত্যেকর জন্য স্ব-স্ব মোটরযানের চিন্তা থেকে সরে আসতে হবে - যদি-না ন্যূনতম স্পেস নিয়ে তৈরী এই বাহনগুলি সবুজ জ্বালানি-চালিত না-হয়, এবং যদি এগুলি তাদের চলাচলের জন্য শহরের ন্যূনতম জায়গা ব্যবহার করা নিশ্চিত করতে পারে।
কিন্তু এই লক্ষ্যগুলি অর্জন করতে হলে আমাদেরকে একই সঙ্গে একদিকে চলাচল খাতে এবং অন্য দিকে ভার্চুয়াল খাতে বহুরকম সৃষ্টিশীল আইডিয়া এবং উদ্ভাবনশীল সামাজিক ব্যবসা সৃষ্টি করতে হবে। চলাচলের জন্য আমাদের স্পেস ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে এবং কার্বন নিঃস্বরণ শূন্যে নামিয়ে আনতে হবে। সামাজিক ব্যবসা হচ্ছে একটি সামাজিক-সচেতনতা চালিত ব্যবসা। এটি সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানকল্পে একটি লভ্যাংশ-বিহীন ব্যবসা। মানুষের চলাচলের সমস্যার টেকসই সমাধান করতে গিয়ে নানা রকম সামাজিক ব্যবসার সৃষ্টি হয়েছে। এটিকে একটি সত্যিকার শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হলে আমাদের বড় আকারের উদ্যোগ নিতে হবে। আমি সরকার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তিবিদ এবং তরুণদের প্রতি আহ্ববান জানাচ্ছি তারা যেন চলাচলের সমস্যাকে সৃষ্টিশীল সামাজিক ব্যবসা উপায়ে সমাধান করতে এগিয়ে আসে। সামাজিক ব্যবসার লক্ষ্য হলো ব্যবসায়িক উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করা। 


যেহেতু সামাজিক ব্যবসা মালিকরা কোম্পানী থেকে কোনো ব্যক্তিগত লভ্যাংশ গ্রহণ করেন না, ব্যবসায়িক উপায়ে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে তাঁরা তাঁদের সকল সৃষ্টিশীল প্রতিভার সমগ্রটাই  সামাজিক ব্যবসায়ে নিয়োজিত করতে পারেন - এসময় তাঁদের সৃষ্টিশীলতার কোন অংশই অর্থ উপার্জনে তাঁদের খাটাতে হয় না।


একজন মানুষ কেন সামাজিক ব্যবসায়ে আগ্রহী হবে? এর উত্তর খুবই সোজা Ñ যদি আপনি একমত হন যে টাকা রোজগার আপনাকে হয়তো সুখ দিতে পারে, কিন্তু অন্য মানুষকে সুখী করা আপনার জন্য হতে পারে পরম সুখের। মানুষ টাকা কামানোর মেশিন নয়। মানুষ দুই ধরনের স্বার্থের দ্বারা পরিচালিত হয় - ব্যক্তিগত স্বার্থ ও সমষ্টিগত স্বার্থ। অর্থনীতি শাস্ত্র ব্যক্তিগত স্বার্থের উপর ভিত্তি করে রচিত শাস্ত্র। তার সিদ্ধান্ত মেনে আমরা ব্যক্তি-স্বার্থের অনুসন্ধানে নিজেদের পুরোপুরি নিয়োজিত করেছি, ব্যবসার লক্ষ্য হিসেবে মুনাফা সর্বোচ্চকরণকে অনিবার্য হিসেবে গ্রহণ করে। সামাজিক ব্যবসা মানুষের দ্বিতীয় ও প্রধান স্বার্থটির ভিত্তিতে রচিত হয়েছে। সামাজিক ব্যবসা সমাজের সমষ্টিগত স্বার্থে কাজ করার সুযোগ আমাদের সামনে এনে দিয়েছে। এই ব্যবসায়ে কোনো ব্যক্তিগত মুনাফার প্রত্যাশা করা হয় না; এটি সমষ্টির সমস্যার সমাধান করার মাধ্যমে সমষ্টিগত সুখ নিশ্চিত করতে নিয়োজিত থাকে। আমরা যখন চলাচলকে সমষ্টির সমস্যার প্রেক্ষাপটে দেখি, তখন ব্যক্তিগত স্বার্থে পরিচালিত ব্যবসার মাধ্যমে এর সমাধান খুঁজলে তা পাওয়া যাবে না। তখন আমাদেরকে সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। এই সমস্যা মোকাবেলায় সামাজিক ব্যবসাই উপযুক্ত ব্যবসায়িক পদ্ধতি।


সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে যানবাহন ব্যবস্থার রূপান্তর ঘটিয়ে আমরা আমাদের জীবনযাত্রা ও কাজের ধরন বদলে দিতে পারি। 

Related

Statement from Professor Muhammad Yunus:

Statement from Professor Muhammad Yunus:   “I congratulate the brave students who took the lead in making our Second Victory Day possible and to the people for giving your total support to them. Let us make the best use of our new victory.  Let us not ...

দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রফেসর ইউনূসের বক্তব্য

০৭ আগষ্ট ২০২৪   দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রফেসর ইউনূসের বক্তব্য:   “আমি সাহসী ছাত্রদেরকে  অভিনন্দন ...

Prof. Muhammad Yunus felicitated in Manila on the occasion of his 40th anniversary of receiving the “Ramon Magsaysay” Award.

Prof. Muhammad Yunus felicitated in Manila on the occasion of his 40th anniversary of receiving the “Ramon Magsaysay” Award.
Yunus Centre Press Release – 03 July 2024   This was made a part of the 65th Anniversary of the Magsaysay Award itself. The event honored the Filipino awardees of the Magsaysay prize in the presence of the diplomatic community.   Susanna B Afan Presi...

 “র‌্যামন ম্যাগসাইসাই” পুরস্কার প্রাপ্তির ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে  প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ম্যানিলায় সম্মাননা প্রদান

 “র‌্যামন ম্যাগসাইসাই” পুরস্কার প্রাপ্তির ৪০তম বার্ষিকী উপলক্ষে  প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে ম্যানিলায় সম্মাননা প্রদান
ইউনূস সেন্টার প্রেস রিলিজ – ০৩ জুলাই ২০২৪   নোবেল লরিয়েট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের “র‌্যামন ম্...

Social Business Academia Dialogue & 3ZERO Club Convention 2024 held in Manila, Philippines

Social Business Academia Dialogue & 3ZERO Club Convention 2024 held in Manila, Philippines
Press Release 30 June 2024   The Academia Dialogue was hosted by Nobel Laureate Professor Muhammad Yunus and organized by the Yunus Centre at the Asia Pacific College in Manila, Philippines on 29 June, 2024. The dialogue was in mutual collaboration with the Asia ...

The 14th Social Business Day concludes in Manila, Philippines

The 14th Social Business Day concludes in Manila, Philippines
  The second day of the 14th Social Business Day 2024, hosted by Nobel Peace Laureate Professor Muhammad Yunus, is being held in Manila on June 28, 2024 at the SMX Aura Convention Center in Philippines. This year’s theme is “Social business- An Exit ro...

The 14th Social Business Day 2024 kicks off in Manila, Philippines

The 14th Social Business Day 2024 kicks off in Manila, Philippines
Press Release     The 14th Social Business Day 2024, hosted by Nobel Peace Laureate Professor Muhammad Yunus and organized by Yunus Centre is being held in Manila from June 27-28, 2024 at the SMX Aura Convention Center in Philippines. This year’s them...

Yunus Never Convicted of Tax Evasion. No such case existed. - Rejoinder to Law Minister's statement in Reuters' news

Press Release - 12 June 2024 In a news report carried by Reuters globally on June 11, 2024. The statement made by Hon’ble Minister for Law, Justice and Parliamentary Affairs of Bangladesh Mr. Anisul Huq MP   is completely baseless and defamatory. He is quote...

ইউনূস কখনোই কর ফাঁকির দায়ে অভিযুক্ত হননি। কর ফাঁকির কোনো মামলা ছিল না। - রয়টার্সের খবরে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ।

প্রেস রিলিজ ১২ জুন, ২০২৪ ১১ জুন, ২০২৪ তারিখে বিশ্বব্যাপী রয়টার্স কর্তৃক পরিবেশিত একটি সংবাদে বাংলাদে...