কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে এখনই বৈশ্বিক সর্বসাধারণের সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হোক
প্রেস রিলিজ
মুহাম্মদ ইউনূস, ডেসমন্ড টুটু, মিখাইল গর্বাচেভ, মালালা ইউসাফজাই, বনো, রিচার্ড ব্র্যানসন, লেস ওয়ালেসা, জোডি উইলিয়াম্স, মাহাতির মোহামাদ, লুলা, জর্জ ক্লুনি, শ্যারন স্টোন, ফরেস্ট উইটেকার, লিমা বুয়ী, মেরি রবিনসন, তাওয়াক্কল কারমান, রতন টাটা, আজিম প্রেমজি, শাবানা আজমি, অ্যান ইদালগো, টমাস বাখ, আন্ড্রেয়া বোচেলি সহ বিশ্ব নেতারা করোনা ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিকভাবে জনগণের সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা দেবার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।
ইউনূস সেন্টারের উদ্যোগে ১৯ জন নোবেল লরিয়েট, ৩২ জন প্রাক্তন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, রাজনৈতিক নেতা, শিল্পী, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রধান সহ ১১১ জন বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব করোনা ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিকভাবে সর্বসাধারণের সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা দেবার এই আহ্বানে স্বাক্ষর করেছেন।
এই আহ্বানে বলা হয়েছে:
একটি মহামারী পরিস্কারভাবে একটি দেশের স্বাস্থ্যপরিচর্যা ব্যবস্থার শক্তি ও দুর্বলতাকে উন্মোচিত করে এবং একই সাথে এই ব্যবস্থায় জনগণের প্রবেশাধিকারের বাধা ও অসমতাগুলো তুলে ধরে। আগত ভ্যাকসিনের প্রচারণার কার্যকারিতা নির্ভর করবে এর সার্বজনীনতার উপর।
আমরা বিভিন্ন সরকার, ফাউন্ডেশন, পরোপকারী ব্যক্তি ও সামাজিক ব্যবসাসমূহকে এই ভ্যাকসিনগুলো বিশ্বব্যাপী বিনামূল্যে উৎপাদন এবং/অথবা বিতরণ করতে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনকে সকল বৈষম্যের উর্ধ্বে থেকে সকল দুর্বল মানুষের রক্ষায় এগিয়ে আসতে আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব পুনর্ব্যক্ত করতে আহ্বান জানাচ্ছি।
জাতি সংঘ মহাসচিব, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক, ধর্মীয় নেতা, সামাজিক ও নৈতিক জগতের নেতৃবৃন্দ, গবেষণাগার ও ঔষধ কোম্পানীসমূহের নেতৃবৃন্দ, এবং মিডিয়া জগতের নেতাদের এই মর্মে একত্রিত হতে ও এটা নিশ্চিত করতে অনুরোধ করছি যেন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে আমরা এই মর্মে একটি বৈশ্বিক সমঝোতায় পৌঁছাতে পারি যে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে বিশ্বব্যাপী একটি সর্বসাধারণের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য ও ব্যবহার করা হবে।
আমরা সকলকে VACCINECOMMONGOOD.ORG ওয়েব সাইটে তাঁদের স্ব-স্ব প্রতিশ্রæতি নিয়ে যোগদান করতে আহ্বান জানাচ্ছি।
আমি আশা করছি আপনার স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আমাদের এই প্রতিশ্রæতিতে সমবেত হতে এবং এই বার্তা বিশ্বের সর্বত্র পৌঁছে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস
এ বিষয়ে আরো জানতে অনুগ্রহপূর্বক যোগাযোগ করুন: yunus@yunuscentre.org
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে এখনই বৈশ্বিক সর্বসাধারণের সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হোক
আমরা নিন্মে স্বাক্ষরকারীগণ সকল বৈশ্বিক নেতা, আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং সরকারসমূহের কাছে এই মর্মে আহ্বান জানাচ্ছি যে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে একটি বৈশ্বিক সর্বসাধারণের সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা হোক যা সকল ধরনের প্যাটেন্ট অধিকারের আওতামুক্ত থাকবে এবং এজন্য আমরা আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সংশ্লিষ্ট সকলের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি। স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন নোবেল লরিয়েটগণ ও নোবেল লরিয়েট সংগঠনসমূহ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সিভিল সোসাইটি নেতৃবৃন্দ এবং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক জগতের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিত্বগণ।
১. এই ভ্যাকসিনে সকলের বিনামূল্যে অধিকার নিশ্চিত করা
স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আমাদের অধিকার কেবল এই ক্ষেত্রে আমাদের একক ও সম্মিলিত দায়িত্বের মাধ্যমেই নিশ্চিত করা সম্ভব। অগ্রাধিকার হিসেবে এ বিষয়ে আমাদের দায়িত্ব ও এই দায়িত্বকে প্রকৃত কর্মযজ্ঞে পরিণত করতে তাত্তি¡ক স্বীকৃতির প্রয়োজন। যেহেতু কোভিড-১৯ পৃথিবী ব্যাপী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সৃষ্টি করে যাচ্ছে তাই এই ভাইরাসের চিকিৎসা ও এর ভ্যাকসিন খুঁজে বের করতে বিশ্বে ব্যাপক গবেষণা কর্মকান্ড ও ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পরিচালিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সকলেই একমত যে, এই মহামারীকে কার্যকরভাবে নির্মূল করতে হলে সকল ধনী ও দরিদ্র দেশের শহর-গ্রাম, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল এলাকার সকল মানুষের জন্য এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ একান্ত প্রয়োজন।
একটি মহামারী পরিস্কারভাবে একটি দেশের স্বাস্থ্যপরিচর্যা ব্যবস্থার শক্তি ও দুর্বলতা উন্মোচিত করে এবং একই সঙ্গে এই ব্যবস্থায় জনগণের প্রবেশাধিকারের বাধা ও অসমতাগুলো তুলে ধরে। আগত ভ্যাকসিনের প্রচারণার কার্যকারিতা নির্ভর করবে এর সার্বজনীনতার উপর।
সরকার ও ফাউন্ডেশনসমূহ, বিশ্বব্যাংকের মত আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাসমূহ এবং স্থানীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর উচিত হবে এই ভ্যাকসিনকে কীভাবে বিনামূল্যে সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায় তার বিস্তারিত কর্মপন্থা নির্ধারণ করা।
আমরা বিভিন্ন সরকার, ফাউন্ডেশন, পরোপকারী ব্যক্তি এবং সামাজিক ব্যবসাসমূহকে (অর্থাৎ যে সকল ব্যবসা ব্যক্তিগত লভ্যাংশের প্রত্যাশা না করে সমাজের কোনো জরুরী সমস্যার সমাধানে নিয়োজিত) এই ভ্যাকসিনগুলো বিশ্বব্যাপী বিনামূল্যে উৎপাদন এবং/অথবা বিতরণ করতে এগিয়ে আসার জন্য আহŸান জানাচ্ছি।
আমরা সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সংগঠনকে সকল বৈষম্যের উর্ধ্বে থেকে ধনী-দরিদ্র, নারী-পুরুষ, সুস্থ-অসুস্থ নির্বিশেষে সকল বয়সের, সকল পেশার, সকল এলাকার দুর্বল মানুষের রক্ষায় এগিয়ে আসতে আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব পুনর্ব্যক্ত করতে আহ্বান জানাচ্ছি।
২. এ-বিষয়ক গবেষণায় বিনিয়োগ থেকে ন্যায্য মুনাফা নির্ধারণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা
কোনো ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে পরিচালিত যে-কোনো গবেষণা একটি দীর্ঘ ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে লেগে যেতে পারে প্রায় ১৮ মাস বা কিছু কম সময়; তা হলেও এটা হবে এ ধরনের আবিস্কারের ক্ষেত্রে একটি স্বল্পতম, রেকর্ড সময়।
এই গবেষণায় বিপুল পরিমাণ আর্থিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। এই ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে বেসরকারী খাতের অনেক গবেষণা সংস্থা এরই মধ্যে নিয়োজিত হয়েছে যারা তাদের বিনিয়োগ থেকে মুনাফা প্রত্যাশা করছে। আবিস্কৃত ভ্যাকসিনকে গণমানুষের কাছে সহজলভ্য করার বিনিময়ে এই বিনিয়োগ থেকে ন্যায্য মুনাফা কী হবে তা নির্ধারণ করার জন্য আমাদেরকে একটি সুস্পষ্ট ও গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য বেসরকারী খাত, বিজ্ঞানীমহল ও সরকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ইস্যুকৃত বিভিন্ন তথ্য সময়োপযোগী, যথাযথ, দ্ব্যর্থহীন, সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন। গবেষণার ফলাফলগুলোকে প্রকাশ্য হতে হবে যেন কঠোর আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণের অধীনে থেকে উপযুক্ত যে-কোনো ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী সংস্থা এই তথ্যগুলোর সদ্ব্যবহার করতে পারে।
৩. কর্ম-পরিকল্পনা
আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের উপর একটি বৈশ্বিক কর্ম-পরিকল্পনা তৈরী করতে অনুরোধ করছি। এজন্য আমরা সংস্থাটিকে এই ভ্যাকসিন বিষয়ক গবেষণা মনিটর করতে এবং একটি পূর্ব-ঘোষিত সময়-কাঠামোর মধ্যে পৃথিবীর সকল দেশ ও মানুষের কাছে এই ভ্যাকসিন যাতে একইভাবে পৌঁছানো যায় তা নিশ্চিত করতে একটি আন্তর্জাতিক কমিটি গঠন করতে আহŸান জানাচ্ছি।
আমরা সকল বিশ্ব নেতা, জাতি সংঘ মহাসচিব, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক, ধর্মীয় নেতা, সামাজিক ও নৈতিক জগতের নেতৃবৃন্দ, গবেষণাগার ও ঔষধ কোম্পানীসমূহের নেতৃবৃন্দ এবং মিডিয়া জগতের নেতাদেরকে ভ্যাকসিনের প্রকৃত উৎপাদন ও বিতরণ শুরু হবার অনেক আগেই এই লক্ষ্যে একত্রিত হতে এবং এটা নিশ্চিত করতে আহ্বান জানাচ্ছি যেন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে আমরা এই মর্মে একটি বৈশ্বিক সমঝোতায় পৌঁছাতে পারি যে, কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে বিশ্বব্যাপী একটি সর্বসাধারণের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য ও ব্যবহার করা হবে।