টোকিও অলিম্পিক ২০২০-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূসকে “অলিম্পিক লরেল” প্রদান: ‘তিন শূন্য’র পৃথিবী গড়ে তুলতে আথলেটদের প্রতি নোবেল জয়ীর আহ্বান
প্রেস রিলিজ
ছবিঃ লামিয়া মোর্শেদ/ইউনূস সেন্টার
অর্থনীতিবিদ, সিভিল সোসাইটি নেতা ও শান্তিতে নোবেল জয়ী প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসকে “অলিম্পিক লরেল” সম্মাননায় ভূষিত করলো আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি। ২৩ জুলাই ২০২১ টোকিওতে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেমস টোকিও ২০২০-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাঁকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। উল্লেখ্য যে, ক্রীড়ার মাধ্যমে শিক্ষা, সংস্কৃতি, উন্নয়ন ও শান্তিতে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি এই বিশেষ সম্মাননা প্রদান করে থাকে। প্রফেসর ইউনূস দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি এই পুরস্কার গ্রহণ করলেন।
তাঁর সম্মাননা গ্রহণসূচক বক্তব্যে প্রফেসর ইউনূস বলেন, “অলিম্পিক লরেল গ্রহণ করতে পেরে আমি সম্মানিত ও অভিভ‚ত বোধ করছি। আমি দুঃখিত যে, আমি আপনাদের সাথে সেখানে সশরীরে উপস্থিত হতে পারিনি। আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি ক্রীড়ার সামাজিক মাত্রার দিকটিকে খুবই গুরুত্বের সাথে নিচ্ছে। আপনারা, পৃথিবীর অ্যাথলেটরা, পৃথিবীকে বদলে দেবার কাজে নেতৃত্ব দিতে পারেন এবং একটি ‘তিন শূন্য’র পৃথিবী - শূন্য নীট কার্বন নিঃসরণ, দারিদ্র চিরতরে দূর করতে শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ এবং প্রতিটি মানুষের সহজাত উদ্যোক্তা-শক্তি বিকাশের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শূন্য বেকারত্বের একটি নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করতে পারেন। ক্রীড়ার মাধ্যমে একটি অধিকতর শান্তিপূর্ণ পৃথিবী গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির যে মিশন আমি তার সাফল্য কামনা করি। একই সাথে আমি প্রতিযোগিতায় সকলের সর্বোচ্চ সাফল্য কামনা করছি।”
প্রফেসর ইউনূসকে ক্রীড়ার মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নে তাঁর বিপুল কর্মকান্ডের জন্য এই “অলিম্পিক লরেল” প্রদান করা হলো যার মধ্যে রয়েছে খেলাধুলার মধ্য দিয়ে সামাজিক সমস্যাসমূহের সমাধানে “ইউনূস স্পোর্টস হাব” নামে একটি বৈশ্বিক সামাজিক ব্যবসা নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা। এছাড়াও তিনি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির বেশ কয়েকটি প্রকল্পে সহায়তা করছেন, যেমন - আইওসি ইয়ং লীডার্স প্রোগ্রাম, “ইমাজিন” পিস ইয়্যুথ ক্যাম্প, এবং অ্যাথলেট৩৬৫ বিজনেস অ্যাকসিলারেটর যা অলিম্পিয়ানদের ক্যারিয়ার উত্তরণে সহায়তা করতে প্রথম ব্যাপকভিত্তিক উদ্যোক্তা কর্মসূচি।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ বলেন, “অলিম্পিক লরেলকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আধুনিক অলিম্পিক গেমসের প্রতিষ্ঠাতা ও পুনঃপ্রবর্তক ব্যারন পিয়েরে দ্য কুবার্তার রূপকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এটি একই সাথে প্রাচীন অলিম্পিক গেমসের আদর্শ ও মূল্যবোধের প্রতিফলনও বটে, যার অন্যতম লক্ষ্য শান্তি ও ক্রীড়ার মধ্য দিয়ে সমাজের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা।”
তিনি আরো বলেন, “এই আদর্শ ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় প্রফেসর ইউনূসের কাজ দৃষ্টান্তমূলক। তিনি উদারভাবে তাঁর বিপুল জ্ঞানভান্ডার দিয়ে খেলোয়াড় ও অলিম্পিক কমিউনিটিকে সমৃদ্ধ করছেন। আমাদের সকলের কাছে তিনি এক বিশাল প্রেরণা। তিনি খেলোয়াড়দেরকে তাঁদের খেলা-পরবর্তী জীবনে সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল ব্যবসা উদ্যোক্তায় পরিণত হতে সহায়তা করছেন এবং এভাবে জাতি সংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহে অবদান রাখার ক্ষেত্রে আমাদের মূল্যবোধকে তুলে ধরছেন। তিনি বিশেষ করে “প্যারিস ২০২৪”-এর মধ্য দিয়ে অলিম্পিক গেমসের জন্য একটি নতুন মডেল তৈরীতে আমাদেরকে সহায়তা করে যাচ্ছেন যেখানে পরিবেশকে সর্বনিম্ন মাত্রায় বিঘ্নিত করে আয়োজক দেশ তার সংস্কৃতি ও মানুষের জন্য সর্বোচ্চ অর্জন নিশ্চিত করতে পারবে। অলিম্পিক কমিউনিটির জন্য তিনি যা করছেন সেজন্য আমরা তাঁকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।”
প্রফেসর ইউনূস বলেন, “মানুষকে সমবেত করতে পৃথিবীতে অলিম্পিক গেমস ও ক্রীড়া সবচেয়ে শক্তিশালী ভ‚মিকা পালন করতে পারে। অলিম্পিক গেমস শান্তিপূর্ণ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে - বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যকে মহিমান্বিত করে - সমগ্র পৃথিবীকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। পিয়াংচেংয়ে ২০১৮ শীতকালীন অলিম্পিকে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার অ্যাথলেটদের সমবেত জাতীয় কুচকাওয়াজ ক্রীড়ার মাধ্যমে শান্তির বিপুল সম্ভাবনার কথা আমাদের প্রবলভাবে মনে করিয়ে দেয়। ‘অলিম্পিক যুদ্ধবিরতি’ স্বচ্ছ প্রতিযোগিতা, শান্তি, মানবতা ও সমঝোতার ভিত্তিতে একটি উন্নততর পৃথিবী সৃষ্টির লক্ষ্যকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা এই শক্তিকে সবচেয়ে কার্যকর উপায়ে পৃথিবীকে বদলে দেবার কাজে ব্যবহার করতে পারি। খেলাধুলার মধ্যে পৃথিবীকে উদ্দীপিত করে জীবনকে পরিবর্তিত করার ক্ষমতা রয়েছে, আর এই ক্ষমতাকে উন্মোচিত করতে সবচেয়ে কার্যকর কৌশল হলো সামাজিক ব্যবসা।”
২০১৬ সালে রিও-তে চালু “অলিম্পিক লরেল” প্রতি গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদান করা হচ্ছে। প্রাচীন অলিম্পিক গেমসের সাথে একটি প্রতীকী সংযোগ হিসেবে ট্রফিটির অধোভাগটি তৈরী করা হয়েছে অলিম্পিয়া, গ্রীসের একটি পাথরের রেপ্লিকা দিয়ে। অলিম্পিক এজেন্ডা ২০২০-এর ২৬ নং সুপারিশ থেকে উদ্ভূত উদ্যোগসমূহের একটি হচ্ছে অলিম্পিক লরেল সৃষ্টি, যা ক্রীড়া ও সংস্কৃতির মধ্যকার মেলবন্ধনকে আরো শক্তিশালী করতে অলিম্পিক আন্দোলনের ভবিষ্যতের জন্য একটি কৌশলগত রোডম্যাপও বটে। কেনিয়ার অলিম্পিয়ান ও সমাজ-সংস্কারক কিপ কাইনোকে ৫ আগষ্ট ২০১৬ রিও ডি জেনিরোতে সর্বপ্রথম অলিম্পিক লরেল প্রদান করা হয়।
পাঁচটি মহাদেশের প্রতিটির প্রতিনিধিত্বকারী কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে ২০২০ সালের অলিম্পিক লরেলের জন্য বাছাই প্যানেলের সদস্যগণ ছিলেন: এশিয়া মহাদেশের পক্ষে বিশ্বখ্যাত জাপানী চিত্রপরিচালক নাওমি কাওয়াসে, দুই আমেরিকার পক্ষে প্রসিদ্ধ বিজ্ঞানী ও কানাডার প্রাক্তন গভর্ণর জেনারেল জুলি পেয়েট, আফ্রিকার পক্ষে ইউএন উইমেন-এর নির্বাহী পরিচালক দক্ষিণ আফ্রিকার ফুমজিল লামবো-এনকুকা, ওশেনিয়ার পক্ষে প্যাসিফিক আইল্যান্ড ফোরাম সেক্রেটারিয়েটের সেক্রেটারী জেনারেল ও পাপুয়া নিউ গিনির রাজনীতিবিদ ডেম মেগ টেলর, ইউরোপের পক্ষে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির অনারারী প্রেসিডেন্ট জ্যাক রগ, এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট টমাস বাখ যিনি জুরির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জুরি সদস্য নাওমি কাওয়াসে বলেন, “অলিম্পিক লরেল সেসব বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রদান করা হয় যাঁরা সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন সাধনে ক্রীড়ার শক্তিকে ব্যবহার করে একটি উন্নততর পৃথিবী গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করছেন। যিনি এ বছরের পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন তিনি সমাজের সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীগুলির ক্ষমতায়ন ও জীবনমান উন্নয়নে তাঁর নিরলস কাজের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত।”
উল্লেখ্য যে, প্রফেসর ইউনূস তাঁর চিন্তাধারা ও কাজের জন্য অসংখ্য আন্তর্জাতিক সম্মাননা ও পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি জাতি সংঘ ফাউন্ডেশনের পরিচালনা পরিষদের অন্যতম সদস্য। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর দারিদ্রমুক্তির লক্ষ্যে ক্ষুদ্রঋণের ধারণার প্রবর্তন এবং এই উদ্দেশ্যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। এছাড়াও তিনি সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানকল্পে লভ্যাংশবিহীন ব্যবসা “সামাজিক ব্যবসা”র ধারণার প্রবর্তক।
Related
Statement from Professor Muhammad Yunus:
দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রফেসর ইউনূসের বক্তব্য
Prof. Muhammad Yunus felicitated in Manila on the occasion of his 40th anniversary of receiving the “Ramon Magsaysay” Award.

Social Business Academia Dialogue & 3ZERO Club Convention 2024 held in Manila, Philippines

The 14th Social Business Day concludes in Manila, Philippines

The 14th Social Business Day 2024 kicks off in Manila, Philippines

Rejoinder to Grameen Bank’s Allegations against Professor Yunus

Grameen America Plans to Invest $40 Billion For Underserved Women of USA In Next Ten Years

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জন্য আগামী দশ বছরে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে গ্রামীণ আমেরিকা

Yunus on European Social Business Tour: Explaining Autonomous Intelligence, Social Procurement, Nobin Entrepreneurs & Paris Olympics
