স্টকহোমে নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ
ইউনূসসেন্টার (১৯জুন২০১৭)
গত ১৫ জুন ২০১৭ সুইডেনের স্টকহোম সিটি কনফারেন্স সেন্টারে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রদত্ত একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে পদ্মা সেতুর জন্য বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ বন্ধের পেছনে প্রফেসর ইউনূসের ভূমিকা থাকা, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ হারানোর পর হিলারী ক্লিনটনকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে টেলিফোন করতে প্ররোচিত করা, গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়, আয়কর না দেয়া ইত্যাদি অভিযোগ করেন।
এই অসত্য অভিযোগগুলো এর আগেও তোলা হয়েছে এবং এগুলোর জবাবও প্রতিবারই দেয়া হয়েছে। আমরা আবারো এগুলোর জবাব দিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী: “আমার প্রশ্ন ছিলো একজন নভেল ল্যরিয়েট হয়ে গেছে সে কেনো এমডি পদের জন্য লালায়িত? আসল মাজেজাটা এখন ধীরে ধীরে বেরুচ্ছে। এখন জানা যাচ্ছে কত টাকা তিনি ট্যাক্স ফাঁকি দিয়েছেন।”
আমাদের বক্তব্য: আমরা আগেও বলেছি যে, প্রফেসর ইউনূসের নিকট কর বিভাগের কোন কর দাবী নেই বা তাঁর কোন বকেয়া করও নেই। প্রফেসর ইউনূস বরাবরই তাঁর কর পুরোপুরি ও সময়মতো পরিশোধ করে আসছেন। তাঁর আয় ও কর সংক্রান্ত সকল তথ্য কর কর্তৃপক্ষের নিকট রয়েছে।
সরকার সন্দেহ করলেন যে, প্রফেসর ইউনূসের হয়তো কোনো গোপন আয়ের উৎস থাকতে পারে যা তিনি দেশে বা বিদেশের নানা ব্যাংকে অঘোষিত হিসাবে রেখে দিয়েছেন। পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে দেশের মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয় যে, তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর উক্ত “অঘোষিত” ব্যাংক হিসাবগুলো সম্পর্কে বিদেশে ও দেশে খোঁজ-খবর নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি ব্যাংকের প্রতিটি শাখায় তাঁর ও তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবের তথ্য ব্যাংকগুলোর কাছে চাওয়া হয়। এই বিপুল অনুসন্ধানের মাধ্যমে সরকার কোনো তথ্য পেয়েছে কি-না সে সম্পর্কে জাতিকে এ পর্যন্ত কোনো কিছু বলা হয়নি।
কয়েক বছর পূর্বে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীসভার একটি বৈঠকে প্রফেসর ইউনূসের আয়কর সংক্রান্ত নথিপত্র পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন তাঁর নিকট অবিলম্বে জমা দিতে সংশ্লিষ্ট সরকারী দফতরকে নির্দেশ দেন। এরপর পত্র-পত্রিকায় বেশ কয়েকবার এই সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। তাঁর আয়কর সংক্রান্ত সকল নথিপত্র সরকার পুনঃ পুনঃ পরীক্ষা করে দেখেছে। এখন পর্যন্ত প্রফেসর ইউনূসকে এ মর্মে কিছু জানানো হয়নি যে, তাঁর ট্যাক্স রিটার্ণসে কোনো সমস্যা আছে। এর মধ্যে সরকার একটি কাজ করেছে Ñ তাঁর আয়কর রিটার্ণসের কয়েকটি ক্ষেত্রে আয়কর আইনের একটি দীর্ঘদিন ধরে অনুসৃত ব্যাখ্যা থেকে কর কর্তৃপক্ষ আকস্মিকভাবে সরে এসেছে এবং তার ফলে তাঁকে অতীতে দেয়া সকল রিটার্ণের উপর আবার অতিরিক্ত আয়কর দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রফেসর ইউনূস আয়কর আইনের এই নতুন ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেছেন। বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। আয়কর সম্পর্কিত বিষয়গুলো কর কর্তৃপক্ষ ও করদাতার মধ্যকার একটি গোপনীয় বিষয়। এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রচার আইনের দৃষ্টিতে দন্ডনীয়। সরকার যে কেবল এ সম্পর্কিত তথ্য পত্র-পত্রিকায় প্রচারই করছে না, বেশ অবমাননাকরভাবে কাজটি করা হচ্ছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, সরকার প্রধান নিজেই এই অসত্য তথ্যগুলো ছড়াচ্ছেন।
মূলকথা: প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ আনাটা পুরোপুরি অসত্য একটি অভিযোগ।
প্রধানমন্ত্রী: “ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থেকে গ্রামীণ ব্যাংকের গরীবের টাকা সরিয়ে নিজের নামে ৪০/৫০ টি কোম্পানি করেন। সেই টাকাতো তারাই সরিয়েছে।”
আমাদের বক্তব্য: এটি অত্যন্ত ভয়ংকর একটি অভিযোগ। এটা বিশ্বাস করা কষ্টকর যে, প্রফেসর ইউনূস এতোদিন ধরে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে গিয়েছেন অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাৎসরিক পরিদর্শন, নিরীক্ষা ও বিভিন্ন ধরনের পরিবীক্ষণে এর কিছুই ধরা পড়লো না। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই ভয়ংকর অভিযোগের পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরবর্তী বাৎসরিক পরিদর্শন প্রতিবেদনসমূহে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোন অভিযোগ উত্থাপন করা হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের অসমর্থিত ও অবমাননাকর দাবী দেশের একজন নাগরিকের সম্মানহানিরই নামান্তর।
প্রফেসর ইউনূসের নামে ৪০/৫০ টি কোম্পানি আছে - এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, পৃথিবীতে কোথাও প্রফেসর ইউনূসের নিজস্ব মালিকানাধীন কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। তিনি বহুবার পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, পৃথিবীর কোথাও কোনো কোম্পানীতে তাঁর কোনো শেয়ার নেই।
প্রফেসর ইউনূসের এই দাবী খুব সহজেই পরীক্ষা করা যায়: কেউ তাঁর মালিকানাধীন শুধু একটি কোম্পানীর নাম বলুক। এ ধরনের কোনো কোম্পানী খুঁজে পাওয়া না গেলে “তাঁর ৪০/৫০টি কোম্পানী আছে” এ ধরনের বক্তব্য সত্যের অপলাপ বলেই প্রতীয়মান হবে।
মূলকথা: প্রফেসর ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ করে তাঁর নিজের নামে কোম্পানী তৈরী করেছেন Ñ এই বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করতে হলে প্রমাণ প্রয়োজন। এ ধরনের কোনো প্রমাণ হাজির করার কোনো গরজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আছে বলে মনে হয়না।
প্রধানমন্ত্রী: “গ্রামীণ ফোনের ব্যবসাটা আমি দিয়েছিলাম। কথা ছিলো ফোনের লাভের টাকা গ্রামীণ ব্যাংকের মাধ্যমে গরীবের কাছে যাবে। সেটাও যায়নি। তাও নিজেই আত্মসাৎ করেন।”
আমাদের বক্তব্য: এটাও প্রমাণ ছাড়া কথা বলা। প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে তহবিল তছরূপের জন্য কখনো কোনো মামলারও উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কিন্তু অভিযোগগুলো বার বারই করা হচ্ছে। টেলিকম লাইসেন্সটি কখনোই প্রফেসর ইউনূস বা কোনো ব্যক্তিকে দেয়া হয়নি। ফলে প্রফেসর ইউনূসের দ্বারা এটা বিক্রি করে দেবার কোনো প্রশ্নই আসেনা। তিনি যেটার মালিক নন সেটা তিনি কীভাবে বিক্রি করলেন? গ্রামীণ ব্যাংকও কখনোই গ্রামীণ ফোনের কোনো শেয়ারের মালিক ছিলনা, ফলে গ্রামীণ ফোনে গ্রামীণ ব্যাংকের শেয়ার বিক্রিরও প্রশ্নই আসেনা। বর্তমান পরিস্থিতি বিচার করে স্বীকার করতে হবে যে, সে সময়ে গ্রামীণ ফোনকে লাইসেন্স দেয়াটা সরকারের একটা ভাল সিদ্ধান্ত ছিল। গ্রামীণ ফোন বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় টেলিফোন কোম্পানী এবং এটা এদেশের একমাত্র কোম্পানী যার প্রায় অর্ধেক শেয়ারই বাংলাদেশীদের হাতে। একই সময়ে দেয়া অন্যান্য টেলিফোন কোম্পানীগুলোর লাইসেন্সগুলো পুরোপুরিই বিদেশীদের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।
মূলকথা: প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে গ্রামীণ ফোনের শেয়ার বিক্রি করে দেবার অভিযোগটি পুরোপুরিই বানোয়াট যা দেশের একজন নাগরিকের সুনামহানির উদ্দেশ্যেই করা। বাস্তবের সাথে এই কাহিনীর কোন সম্পর্ক নেই।
প্রধানমন্ত্রী: “আর গ্রামীণ ব্যাংকের আইন ভঙ্গ করে প্রায় ১০ বছর এমডি পদে থাকেন।” “তাকে বলা হয়েছিল আপনি ছেড়ে দেন। আমাদের অর্থমন্ত্রী, গরহর রিজভী নিজেরা গিয়ে তাকে বলেছিলেন। উনি তা না শুনে মামলা করলেন।” “আইনে নাই কারণ কোর্ট তো তার বয়স কমিয়ে দিতে পারবে না। ফলে তিনি এমডির পদ হারালেন।” “এমডি সরকারি পদ। চাকুরিটাই ছিলো সরকারি নিয়ম অনুযায়ী। কিন্তু তিনি কোন নিয়ম কখনো মানেননি।”
আমাদের বক্তব্য: প্রফেসর ইউনূস কখনোই গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদ ধরে রাখার জন্য উৎসুক ছিলেন না। তিনি যতোবারই এই পদ ছেড়ে দিতে চাইছিলেন, প্রতিবারই পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা তাঁকে ব্যাংক ছেড়ে চলে না যেতে অনুরোধ করছিলেন। ১৯৯০ সালে গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের শেয়ার ৬০শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয় এবং ঋণগ্রহীতাদের শেয়ার ৪০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭৫ শতাংশ করা হয়। সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে পরিচালনা পরিষদের উপর ন্যস্ত করা হয়। ব্যাংকের সকল নিয়মনীতি তৈরীর ক্ষমতা পরিচালনা পরিষদকে দেয়া হয়। তেরো সদস্য বিশিষ্ট পরিচালনা পরিষদে চেয়ারম্যানসহ তিন জন সদস্য নিয়োগ দেয়া ছাড়া আর কোনো ক্ষমতাই সরকারের কাছে রাখা হয়নি। সরকারী চাকুরী বিধি অনুসরণ করার কোনো বাধ্যবাধকতা গ্রামীণ ব্যাংকে রাখা হয়নি। অন্যান্য ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংকের মতো ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগ দেবার ক্ষমতা রাখা হয়েছিল বোর্ডের কাছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ বা তার শর্তাবলী ধার্য করার ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের কাছে রাখা হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক অবসরে যাবার বয়সের প্রশ্ন তুলে প্রফেসর ইউনূসকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেয় ২০১১ সালে। এ সময়ে প্রফেসর ইউনূস হাইকোর্র্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। হাইকোর্ট শুনানির জন্য তাঁর রীট আবেদন এই মর্মে প্রত্যাখান করেন যে, এই পিটিশন দাখিলযোগ্য নয়, অর্থাৎ আইনের ভাষায় এটা দাখিল করার লোকাস স্ট্যান্ডি তাঁর নেই। এরপর তিনি আপীল বিভাগের নিকট আপীল করেন এবং আপীল বিভাগও একই মর্মে তাঁর আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। প্রফেসর ইউনূস আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে অবিলম্বে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
মূলকথা: প্রফেসর ইউনূস কখনোই গ্রামীণ ব্যাংকের কোনো নিয়ম ভঙ্গ করেননি।
প্রধানমন্ত্রী: “হিলারী ক্লিনটনকে দিয়ে তিনি আমাকে ফোন করালেন।”
আমাদের বক্তব্য: প্রফেসর ইউনূস কখনোই হিলারী ক্লিনটনকে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট টেলিফোন করাননি। হিলারী ক্লিনটন প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে থাকলে তা তিনি নিজে থেকেই করেছেন। গ্রামীণ ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে অনেক বিশ্ব নেতাই সে সময়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট টেলিফোন করেছেন, চিঠি লিখেছেন, ব্যক্তিগত দূত পাঠিয়েছেন, সরাসরি কথা বলেছেন এবং পৃথিবীর অনেক বিখ্যাত পত্রিকায় যৌথ বিবৃতিও দিয়েছেন। হিলারী ক্লিনটন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে থাকলে তা তিনি স্ব-উদ্যোগেই করেছেন।
মূলকথা: প্রফেসর ইউনূস কখনোই হিলারী ক্লিনটনকে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট টেলিফোন করাননি। হিলারী ক্লিনটন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করে থাকলে তা তিনি নিজে থেকেই করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী: “বিদেশে তার ইনভেষ্টমেন্ট গড়া, বিদেশে টাকা দেওয়া। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে টাকা দেওয়া কোথা থেকে কিভাবে এই টাকাগুলো তিনি দিলেন। এগুলো এখন প্রশ্ন এসেছে।”
আমাদের বক্তব্য: প্রফেসর ইউনূস কখনোই দেশের বাইরে বিনিয়োগ করতে টাকা পাঠান না। বরং তিনি তাঁর বিদেশে অর্জিত অর্থ দেশে এনেছেন। তিনি টেলিনরের মতো বড় বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে এনেছেন। তিনি ইন্টেল কর্পোরেশন, ড্যানোন, ভেওলিয়া, ইউনিক্লো, বিএএসএফ, ইউগ্লেনার মতো বিশ্বখ্যাত কোম্পানীগুলোকে বাংলাদেশে এনেছেন।
কোথাও এ ধরনের কোনো অভিযোগ ওঠেনি যে, প্রফেসর ইউনূস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে বা হিলারীর নির্বাচনী তহবিলে ব্যক্তিগতভাবে টাকা দিয়েছেন। এগুলো কিছু স্থানীয় পত্রিকার কল্পনাপ্রসূত কাহিনী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে যে, ইউনূসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো কোম্পানী হিলারী ক্লিনটনের সাথে সাক্ষাতের জন্য হিলারীর পারিবারিক ফাউন্ডেশনে চাঁদা দিয়েছে। পরবর্তীতে কাহিনীটিকে আরো বিশ্বাসযোগ্য করতে আরেকটু ভিন্নভাবে বলা হলো যে, স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে মার্কিন করদাতাদের কোটি কোটি টাকা অনুদান হিসেবে পেতে প্রফেসর ইউনূস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে চাঁদা দিয়েছিলেন।
প্রফেসর ইউনূসের কর্ম ও দর্শনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পৃথিবীতে ডজন ডজন এনজিও রয়েছে। এদের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি বহুল পরিচিত সংস্থা রয়েছে। একটি ওয়াশিংটন ডিসি-তে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ফাউন্ডেশন, অপরটি নিউ ইয়র্কে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ আমেরিকা। জার্মানীর ফ্রাঙ্কফুর্টে প্রতিষ্ঠিত আরেকটি সংস্থা হচ্ছে ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস। আরো বহু দাতা সংস্থার পাশাপাশি তারা ইউএসএআইডি থেকেও তহবিল পেয়েছে। ইউএসএআইডি-র নিয়মিত কঠোর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তারা এই তহবিলগুলো পেয়েছে। এ ধরনের চিন্তা আদৌ বাস্তবসম্মত নয় যে, প্রফেসর ইউনূস ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে সামান্য কিছু “ডোনেশন” দিয়েছিলেন বলে তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত এনজিওরা এই তহবিলগুলো পেয়েছিল।
ধনাঢ্য মার্কিন ব্যবসায়ী ও গ্রামীণ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ভিডার জরগেনসেন ক্লিনটন ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত বাৎসরিক অনুষ্ঠান ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিসিয়েটিভ-এ যোগদানের জন্য ফি হিসেবে প্রতি বছর ২০,০০০ মার্কিন ডলার করে দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ আমেরিকার জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য সম্ভাব্য দাতাদের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিসিয়েটিভকে একটি ভাল প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বিবেচনা করতেন যার মাধ্যমে তিনি দরিদ্র মহিলাদেরকে ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের জন্য আরো তহবিল সংগ্রহ করতে পারেন। এ বছরের শেষ নাগাদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি নগরীতে গ্রামীণ আমেরিকার বিতরণ করা ক্ষুদ্রঋণের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
মূলকথা: প্রফেসর ইউনূস বা তাঁর আদের্শ প্রতিষ্ঠিত কোনো বেসরকারী সংস্থা ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিসিয়েটিভকে কখনো কোনো চাঁদা দেননি। প্রফেসর ইউনূস ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিসিয়েটিভের অনুষ্ঠানে শুধু বক্তা হিসেবে যোগদান করেছেন এবং এজন্য তাঁকে কখনো কোনো ফি দিতে হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী: “আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। কারণ দেশের সেবা করতে এসেছি, তাদের মতো গরীবের টাকা বা গরীবের রক্ত চুষে খেতে আমরা আসিনি। গরীবের ভাগ্য পরিবর্তন করতে এসেছি।” “বিশ্বব্যাংককে দিয়ে পদ্মাসেতুর টাকা বন্ধ করা আর আমাদের উপর দূর্নীতির অভিযোগ আনা। তার পেছনেও যে তাদের হাত আছে এতে কোন সন্দেহ নেই।”
আমাদের বক্তব্য: প্রফেসর ইউনূস পদ্মা সেতু প্রকল্পে দূর্নীতির সম্ভাবনা বিষয়ে প্রকাশ্যে বা ব্যক্তিগতভাবে কখনো কারো কাছে কোন বিবৃতি দেননি। আমরা আবারো প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে এই ভিত্তিহীন অভিযোগের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বরং প্রফেসর ইউনূস ২০১১ সাল থেকে বহুবার এই মর্মে বলে এসেছেন যে, তিনি বরাবরই বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন পদ্মা সেতু প্রকল্পের একজন সমর্থক এবং এই স্বপ্নের বাস্তবায়নে তাঁর বাধা হয়ে দাঁড়ানোর কোন প্রশ্নই আসেনা। সম্প্রতি জাতীয় সংসদের ফ্লোরে দাঁড়িয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক এ বিষয়ে তাঁকে অভিযুক্ত করার পর গত ২৮ জানুয়ারী ২০১৭ তারিখে সহ বহুবার তিনি এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেছেন। সরকারের বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ তৈরীতে তিনি কখনোই কোনোভাবে যুক্ত ছিলেন না। এই কল্পিত কাহিনীগুলো বিশ্বাসযোগ্য করতে এগুলো বার বার বলা হচ্ছে।
সিনেটর গ্র্যাসলি কর্তৃক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারনসকে লেখা সাম্প্রতিক একটি চিঠিতে প্রফেসর ইউনূস কর্তৃক ক্লিনটন ফাউন্ডেশনকে দেয়া অনুদান নিয়ে আবারো প্রশ্ন উঠেছে।
সিনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর গ্র্যাসলি কর্তৃক পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারনসকে লেখা একটি চিঠি সিনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটির তদন্ত বলে কোনো কোনো পত্রিকায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। এ তথ্য সঠিক নয়। মার্কিন সিনেটরগণ সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাছে যে-কোনো সময়ে যে-কোনো বিষয়ে প্রশ্ন করার ক্ষমতা রাখেন। তাঁদের নির্বাচক বা সমর্থকরা তাঁদের কাছে কখনো কোনো কিষয়ে জানতে চাইলে তাঁরা এই ক্ষমতাবলে নির্বাহী বিভাগের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে থাকেন। এ ধরনের চিঠি মানেই তদন্ত নয় ¬ তদন্ত আরো গভীর একটি প্রক্রিয়া। সিনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিতর্কের পর কমিটি তদন্তের সিদ্ধান্ত নিলে তদন্তের বিষয়বস্তু সুনির্দিষ্ট হবার পরই কেবল তদন্ত শুরু হয়। এটা একটা দীর্ঘ ও সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। সিনেটর গ্র্যাসলির চিঠি এই প্রক্রিয়া সৃষ্টি করে না।
মার্কিন সিনেটের জুডিশিয়ারী কমিটি এ বিষয়ে কোনো তদন্তের সিদ্ধান্ত নিলে ইউনূস সেন্টার তাকে স্বাগত জানাবে। এ ধরনের কোন তদন্ত অনুষ্ঠিত হলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। বর্তমানে প্রফেসর ইউনূসকে মিথ্যা প্রচারণার লক্ষবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে। প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত হলে মিথ্যার কোন জায়গা থাকবে না।
মূলকথা: সিনেটর গ্র্যাসলির চিঠির অর্থ তদন্ত নয়। তদন্ত ভিন্ন বিষয়। কোনো তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হলে ইউনূস সেন্টার বরং তাকে স্বাগত জানাবে কেননা এর মধ্য দিয়ে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
(সমাপ্ত)